দুঃস্বপ্ন (গল্প)



এই মুহূর্তে শায়লাকে দেখে বোঝার উপায় নেই ঠিক কি ঘটে যাচ্ছে তার ভেতরে। সুন্দরি শায়লা মামুনের স্ত্রী আর একমাত্র ছেলে বুবুনকে নিয়ে তাদের সুখের সংসার। বার্নিশ করা আসবাবপত্র,ঝকঝকে মেঝে আর দেয়ালের রং দেখে অন্ততঃ তাই বোঝা যায়। তবে সুখের কথাটার পরে বিস্ময় চিহ্নআবশ্যক! ঘরময় ঝুলে থাকা রঙ বেরঙের বেলুন, ডাইনিং আর ড্রয়িং রুমেরঅবস্থা দেখে যে কারো বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় আজ এ ফ্ল্যাটে হৈহল্লা ছিল জন্মদিন উৎসবের। হ্যাঁ, আজ ছিল শায়লা এবং মামুনের একমাত্র ছেলে বুবুনের বার্থডে। বুবুনের বয়স আজ ছ’তে পড়ল। বুবুনের বাবা মামুন সারাদিনের এই আয়োজনের কোথাও উপস্থিত ছিলেন না ফলে আজকের এই উৎসব ছিল কিছুটা অন্যরকম। এই প্রথম বুবুন তার বার্থডেতে মন খারাপ করে বসেছিল সারাক্ষণ। এখন বাজে রাত দেড়টা। ঘড়ির কাঁটা টিক টককরে অবিরাম জানান দিচ্ছে সময়। শায়লা ডাইনিং টেবিলে বিষণ্ণমুখে বসে আছে। বুবুনটা মুখ ভার করে ঘুমিয়ে পড়েছে আজ একটু সকাল সকাল। ডোর বেলের টিং টং শব্দে শায়লার ভাবনায়ছেদ পড়ে। শায়লা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজায় দাঁড়িয়ে গৃহকর্তা মামুন! যার উপস্থিতি ছিল সবার কাম্য। মামুনকে দেখে শায়লারবিষণ্ণতা রাগ আর বিরক্তিতে পরিণত হয়। মামুন ধীর পায়ে ক্লান্তশ্রান্ত ভাবে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে। বাঁ হাতে ভাঁজ করে রাখা কোট সোফায় রাখে। হাতের ব্রিফকেস ছোট টেবিলটাতে রাখতে রাখতে শায়লার দিকে একবার দেখে নেয়। শায়লা মুখ ঘুরিয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে।

-      বুবুন কি ঘুমিয়ে পড়েছে?

মামুন তাকায় শায়লার দিকে। শায়লা তখনো অন্য দিকে মুখ

ফিরিয়ে থাকে।

-      এ সিজনে সবচে বড় অর্ডারের

ফাইনাল ইন্সপেকশান ছিল আজ।

কাল...শিপমেন্ট

মামুন টাই আলগা করে শাটের ইন ছাড়ায়, জুতা খুলে ফেলে। শায়লা এ কথার ও কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না।

-      বায়ার ছিল সারাদিন। বায়ারের পেছনে আঠার মতো লেগে থাকতে হয়েছে। কোনো উপায় ছিল না

-আমার ক্ষিধে পেয়েছে!

শায়লা মামুনের দিকে ফিরে কাটাকাটা ভাবে কথাগুলো বলে।

-      এই শিপমেন্টের সাথে কোম্পানির হাজার লোকের

ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে। আমিও সেই হাজারের একজন।

মামুন যেন নিজেই নিজের কাছে কৈফিয়তের সুরে কথাগুলো বলে। শায়লা শুনল কি শুনলনা কে জানে! মামুন বুবুনের রুমের দিকে যায়।

-  তোমাকে কেউ কিছু জিগ্যেস করেনি। আমার ঘুম পাচ্ছে। ফ্রেশ

হয়ে খেতে এসো।

শায়লা ঝাঁঝ মিশিয়ে কথাগুলো বলে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।

-----

মামুন দরজা খুলে বুবুনের ঘরে ঢোকে। রুমের বাতি জ্বালানো অবস্থাতেই বুবুনটা ঘুমোচ্ছে। কি প্রশান্তির ঘুম! এ মুখ দেখলেই সারাদিনের অবসাদ, ক্লান্তি নিমেষে মিলিয়ে যায়। বুবুনের কচি মনের সারাদিনের মনোভাব কল্পনা করে মামুনের কিছুটা কষ্ট লাগে।বাবাকে না পেয়ে কেমন ছিল ছেলেটার মনের অবস্থা কে জানে!এটা সেটা ভেবে বাতি অফ করতে গিয়ে চোখ আটকে যায় মেঝেতে পড়ে থাকা বড় পেজের কাগজটায়। কাগজটা হাতে নিয়ে মামুন উলটে দেখে। বুবুনের আঁকা কাঁচা হাতের ছবি। অবয়ব দেখে বোঝা যায়পেছনে দাঁড়িয়ে দুজন নারীপুরুষ হাসি হাসি মুখ। সামনে সোফার মতো কিছু একটায় একজন লোকের কোলে বসে ছোট একটা ছেলে। লোকটার মুখে হালকা দাড়ির মত কিছু পেন্সিল স্কেচ। বুবুন বোধ হয় ছবিতে তার দাদু মানে মামুনের বাবার কোলে বসে আছে এমন কিছু আঁকতে চেয়েছে। পেছনে হয়ত মামুনআর শায়লা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে এমন কিছু বোঝা যাচ্ছে। ছবিটাতে কোন রঙ নেই। মামুনের মনে পড়ে বুবুন রঙ পেন্সিল কিনে আনার কথা প্রায়ই বলে। আগেরগুলো শেষ হয়ে গেছে। শায়লাও সকালে বেরোবার সময় বলে দিয়েছিল আজ যেন রং পেন্সিল আনতে একদম ভুল না হয় । মামুনের মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। ছোট এই জিনিসটা আনতে না পারার জন্যে। আসলে সারাদিন অফিসেরকাজের চাপের মধ্যে মনেও থাকেনা। তাছাড়া সে যখন অফিস থেকে বেরোয় তখন দোকানগুলোও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আজ ব্যাপারটায় অন্য মাত্রা যোগ হয়েছে যখন গ্রামের বাড়ি থেকে সামশু চাচার ফোন পেলো মামুন। সামশু চাচা মামুনের বাবার দেখাশোনা করে থাকে। গরীব প্রতিবেশি। ফোন পেয়ে মামুনেরসবকিছু অন্যরকম হয়ে যায়। মামুন ভাবনায় তলিয়ে যায়। বুবুনের আঁকা ছবিটা পড়ার টেবিলের ওপর ছোট পিং পং বলদিয়ে চাপা দিয়ে রুমের বাতি নিভিয়ে দরজা আলতো করে টেনে বন্ধ করে দেয় মামুন।

------

মামুন আনমনে কিছু ভাবতে থাকে আর প্লেটে ভাত নাড়াচাড়া করে।খাওয়ার দিকে খেয়াল নেই এতটুকু। শায়লা চামচ দিয়ে আরেকটুকরো মুরগির মাংস ঢেলে দেয় মামুনের প্লেটে। মামুন হাতদিয়ে না বোঝায়। শায়লা বলে চলে-

- বুবুনের মুখের দিকে চাওয়া যায়না...

- ফ্ল্যাটের সব বাচ্চারা এত হাসিখুশি চেঁচামেচি করে সারা ঘর

মাথায় তুলল যে টেকাই দায় অথচ বুবুন...

বুবুন শুধু মন খারাপ করে এক কোণে বসে ছিল চুপচাপ...

মামুন শায়লার কথায় কিছু বলেনা। অন্য কিছু ভাবছে সে।

- দরজায় কলিং বেলের শব্দ পেলেই ছুটে গিয়ে দেখে কে এল। তারপর

গিয়ে চুপচাপ সোফায় বসে ছিল ছেলেটা। ভাবীরা কিছুক্ষণ পর পর

জিগ্যেস করে মামুন ভাইয়ের জন্য আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবেন ভাবী? ...শুরু

করে দিবেন নাকি ? রাত ত অনেক

হল...সাহেবরা চিন্তা করছে...

আমাদের যেতে হবে।

শায়লার কণ্ঠে রাগের

সাথে কান্না করবার

মতো অভিব্যক্তি ঝরে।

-কি জবাব দেব?...

-তোমাকে ফোন করেছি এতবার।

একবারও ধরার সময় হলনা তোমার!

এবার

শায়লা ঝাঁঝালো কণ্ঠে কথাগুলো

বলে মামুনের দিকে তাকায়।

মামুন তখনো কিছু ভাবছে। শায়লার

কথা শুনেছে বলে মনে হয় না।

বরং মামুন অন্যমনস্কের

মতো ধীরভাবে দৃঢ় কণ্ঠে বলে-

-সামশু চাচা ফোন করেছিল

সকালে

        -বলল বাবার শরীর খুব খারাপ

করেছে...

শায়লার

চেহারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক

হয়। রাগ কিংবা বিরক্তির কোন কিছু

প্রকাশ পায় না। বরং অন্য কিছু

ফুটে ওঠে চেহারার অভিব্যক্তিতে।

-এবার বোধহয় বাবার শেষ...

মামুন ধরা গলায় কথা শেষ

না করে শায়লায় দিকে ক্রুদ্ধ

দৃষ্টিতে তাকায়। শায়লা চোখ

নামিয়ে নেয় অপরাধীর মত।

পরমুহূর্তে  দুজনেই চুপচাপ বসে থাকে।

মুহূর্তগুলো স্থির চিত্রের মত অথচ

জীবন্ত । একজন মাথা নিচু করে চুপচাপ

বসে আছে অন্যজন অনল দৃষ্টিতে অবনত

মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

শায়লা এবার চোখ তুলে মামুনের

দিকে তাকালে দেখে- মামুন

তখনো তার দিকে ক্রুদ্ধ

দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শায়লার

চেহারার অভিব্যক্তি বদলে যায়।

তাচ্ছিল্য ভরা ক্ষীণ

হাসি ফুটে ওঠে শায়লার ঠোঁটে।

- ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

এবার মামুনের চোখ অবনত করবার

পালা। স্থিরচিত্র বদলে যায়। মামুন

দৃষ্টি স্বাভাবিক করে অপরাধির মত

মাথা নিচু করে বসে থাকে। কতক্ষণ

এভাবে কেটে গেছে দেয়াল

ঘরিটার আবেগহীন কাঁটাই কেবল

জানে। অবিরাম টিক টক টিক টক

করে বেসুরো কণ্ঠে সময় গুনে চলেছে।

মামুন কি ভেবে আস্তে করে চেয়ার

সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। শায়লার

দৃষ্টি মামুন কে অনুসরণ করে। মামুন

বেসিনে হাত ধুয়ে বেডরুমের

দিকে চলে যায়।

-----

বেডরুমের বাতি অফ কিন্তু টেবিল

ল্যাম্প জ্বালানো থাকে। মামুন ফুল

স্পীডে ঘূর্ণায়মান সিলিং ফ্যানের

দিকে  তাকিয়ে কি খুঁজছে অন্য

কারো বুঝবার উপায় নেই। তার

চোখের পলক পড়েনা। ক্লান্ত

দেহে এক ফোঁটা শক্তি নেই অথচ

চোখে ঘুম নেই ।

অন্যপাশে ফিরে শায়লা শুয়ে আছে।

মামুন স্বগোক্তির মত করে বলে

-আমি যখন খুব ছোট ছিলাম ঠিক

বুবুনের বয়সী...

শায়লা এ-পাশ ফিরে । বিরক্ত

কণ্ঠে বলে

-বাতি জ্বালিয়ে রেখেছ কেন!

মামুনের সেদিকে খেয়াল নেই।

মামুন যেন নিজেই নিজেকে বলে

-একদিন মাঝরাতে কি যেন শব্দ

শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়...চোখ

খুলে অবাক হয়ে যাই আমি। দেখি...

বাবা আমার দিকে অদ্ভুত

ভাবে তাকিয়ে আছে।

পাশে দাঁড়িয়ে আছে মা...

শায়লা মামুনের কথা শোনে না।

মামুন যেন নিজেই

নিজেকে কথাগুলো বলে চলছে

-আমার সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল

আমি যেন বাবাকে অনেকদিন

দেখিনি!

শায়লা এবার খুব বিরক্ত হয়।

-বাতি নেভাও!

মামুন শায়লার কথায় যেন সম্বিৎ

ফিরে পায়। মামুনের

ঝাপসা দৃষ্টি ঘূর্ণায়মান ফ্যান

থেকে শায়লার দিকে একবার

ফিরে। তারপর হাত বাড়িয়ে অন্য

পাশে টেবিল ল্যাম্পের সুইচ অফ

করে দেয়।

-------

শায়লা বিছানার এক

পাশে ফিরে ঘুমুচ্ছে। মামুন ঘুমের

মধ্যে ছটফট করতে থাকে।

কি একটা দুঃস্বপ্ন দেখে লাফ

দিয়ে উঠে যায়। মুখ

থেকে অস্ফুটে “বুবুন”...”বুবুন” শব্দ

বেরোয়। হাত বাড়িয়ে টেবিল

ল্যাম্পটা জ্বালায়। মামুনের নিশ্বাস

জোরে জোরে উঠানামা করে।

মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যায় অথচ

ফ্যান ফুল স্পীডে ঘুরছে।

পাশে রাখা পিরিজে ঢাকা গ্লাস

নিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের

পানি খালি করে রেখে দেয়। পাশ

ফিরে দেখে শায়লা ঘুমে আচ্ছন্ন।

মামুন বিছানা থেকে দ্রুত

পা নামিয়ে চপ্পল পড়ে ছুটে ব্যাড রুম

থেকে বেরিয়ে যায়। বুবুনের রুমের

দরজার লক

আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে খুলে পাছে শব্দ

হয়ে বুবুনের ঘুম ভেঙ্গে না যায়।

বাইরে বারান্দার

হালকা আলো ঘরের মেঝেতে ছড়ায়।

মামুন বুবুনের খাটের পাশে দাঁড়ায়।

বিস্ফোরিত চোখ আর বুক

তখনো উঠানামা করতে থাকে আগের

মত। বাইরের হালকা আলোয় বুবুনের মুখ

দেখতে পায় মামুন। বুবুন

নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। কি প্রশান্তির ঘুম!

এত প্রশান্তির ঘুম একমাত্র

শিশুরা ছাড়া আর

কেইবা ঘুমাতে পারে! মামুনের

মনে পড়ে না এভাবে কত কাল

আগে সে বুবুনের মতো ঘুমিয়েছে।

মামুন হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচে।

চেহারার অভিব্যক্তি স্বাভাবিক

হয়। বুকের উঠানামা নরমাল হয়ে যায়।

মামুন বুবুনের খাটের

পাশে বসে শব্দহীন। বুবুনের মাথায়

হাত বুলিয়ে দেয়। ছেলেটার গায়ের

কাঁথা অনেকটা নেমে যায়।

ছেলেটা গরমের দিনেও

কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমোয়। এক

বাজে অভ্যাস হয়েছে সেই ছোট বয়স

থেকেই। মামুন অভ্যাসটা ছাড়াবার

চেষ্টা করেছিল কয়েকবার। কিন্তু

বুবুনের বুকে ঠাণ্ডা লেগে যায়।

সারা রাত কাশতে থাকে।

ফলে সে চেষ্টা আর

কখনো করেনি মামুন

কিংবা শায়লা কেউই। মামুন বুবুনের

গায়ে কাঁথা টেনে দেয় বুক অব্দি।

নিশ্চিন্ত

হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে রুমে

ফিরে যাবে অম্নি বুবুন

সোজা থেকে এপাশ ফিরে শোয়।

মামুন খেয়াল করে বুবুনের

পা কাঁথা থেকে বের হয়ে থাকে।

কিন্তু এ কি! বুবুনের পা এত

অস্বাভাবিক বড় কেন! মামুন ভয়

পেয়ে পিছিয়ে যায়। বুকের

উঠানামা দ্রুত হয়, চোখ বিস্ফোরিত

হয়ে যায়। মামুন যেন দুঃস্বপ্ন দেখছে।

দুঃস্বপ্নের ভয় জেঁকে বসে। মামুন

ধীরে ধীরে বুবুনের চেহারার

দিকে তাকিয়ে আতঙ্কে শব্দ

করে আরও পিছিয়ে যায়। বুবুন কোথায়!

মামুন দেখতে পায় বুবুনের জায়গায়

মামুন নিজেই ঘুমিয়ে আছে। এ

কী করে সম্ভব! উ...উ...মামুন

দুহাতে চোখ ঢেকে ফেলে। হাত

সরাতেই মামুন বিছানায় তার

নিজের বাবার অবয়ব দেখতে পায়।

অসম্ভভ! কী ভয়ঙ্কর!...আতঙ্কে মামুনের

মুখ থেকে শব্দ বেরিয়ে যায়। মামুন

তার কাঁধে কিছু একটার স্পর্শ

পেয়ে চিৎকার করে ওঠার মত শব্দ

করে পিছিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। মামুন

দেখে স্ত্রী শায়লা তার

দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

শায়লা শব্দ শুনে বুবুনের

রুমে এসে দাঁড়ায় মামুনের পেছনে।

শায়লা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মামুনের

দিকে তাকালে মামুন কোন

কথা বলতে পারে না শুধু

মুখে গোঁ ...গোঁ...জাতীয় শব্দ

করে হাতের ইশারায় বুবুনের খাটের

দিকে দেখায়।

শায়লা উঁকি দিয়ে বুবুনের

খাটে দ্যাখে। তারপর মামুনের

দিকে তাকিয়ে জিগ্যাসু

দৃষ্টিতে বলে

- “কি?”...।

মামুন ভয়ঙ্কর কিছু

আশঙ্কা করে ঘুরে তাকায় বুবুনের

দিকে। দেখে কি অদ্ভুত! আশ্চর্য!

বুবুনইতো ঘুমিয়ে আছে বিছানায়!

বুবুনের ছোট

কচি পা বেরিয়ে আছে কাঁথার

বাইরে। ছেলেটা আগের মত

সোজা হয়ে শোয়। কি প্রশান্তির ঘুম

ঘুমোচ্ছে ছেলেটা! মামুনের মাথায়

যেন কিছুই ঢোকে না। এতক্ষণ

কি থেকে কি হয়ে গেল! শায়লার

মনোভাব বুঝতে পেরে মামুন

লজ্জা পায়। একবার শায়লার

দিকে আরেকবার বুবুনের

দিকে তাকায়। নড়ে চড়ে -শব্দ আর

আলো কিনা কে জানে -বুবুন

আড়মোড়া দিয়ে ঘুম

থেকে উঠে যায়। ছেলেটার ঘুম

ভেঙ্গে গেল। চোখ

ডলতে ডলতে দেখে বাবা

অদ্ভুতভাবে তার

দিকে তাকিয়ে আছে।

পাশে দাঁড়িয়ে তার মা শায়লা!

বুবুনের হঠাৎ

কী মনে হল...খুশীতে বলে উঠল

-বাবা!

মামুন খুব অবাক হয়ে যায়। চোখ

কপালে ওঠে। মামুনের

মনে পড়ে ছোটবেলার সেই স্মৃতি।

মামুন যখন খুব ছোট ছিল ঠিক বুবুনের

বয়সী... একদিন মাঝরাতে কি যেন

শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়...চোখ

খুলে অবাক হয়ে যায় সে। দেখে...

মামুনের বাবা তার দিকে অদ্ভুত

ভাবে তাকিয়ে আছে।

পাশে দাঁড়িয়ে ছিল মামুনের মা।

তার সেই

মুহূর্তে মনে হয়েছিলো সে যেন

অনেকদিন তার বাবাকে দেখেনি!

মামুনের বুকে যেন সুদুর

থেকে একটা শিশু কণ্ঠ

ডেকে ওঠে “বাবা!...”

মামুন বাস্তবে ফিরে আসে। বুবুনের

টেবিলে ছবির ওপর থেকে ছোট

পিং পং বলটা গড়িয়ে পড়ে যায়...

ছোট ছোট লাফ

দিয়ে বলটা থেমে যায়।

ছবিটা বাতাসে উড়ে মেঝেতে

পড়ে যায়। মামুন

ঝুঁকে পড়ে ছবিটা তুলে নেই। বুবুন তার

দাদুর কোলে বসে আছে।

পেছনে মামুন আর

শায়লা দাঁড়িয়ে হাসিমুখে।

মামুনের বেডরুমে মবাইল

ফোনটা কয়েকবার ভাইব্রেট

করে সাইলেন্ট মুডে জ্বলে আর

নিভে। ফোন ধরার জন্য মামুন

কাছে নেই। ফোনের

স্ক্রিনে লেখা ওঠে “Samshu Chacha

Calling…”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছোট্টো মেয়ে ও গরীব কৃষক (শিশুতোষ গল্প)